কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মানোন্নয়নের দাবিতে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে চাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডাক্তার ও জনবলের সংকট, যন্ত্রপাতির অভাব এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এ উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার প্রধান ভরসা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই হাসপাতালটি বিভিন্ন সংকটে ভুগছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে অনুমোদিত পদের তুলনায় চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা অনেক কম। বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তীব্র সংকট রয়েছে। ফলে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের মৌলভীবাজার বা সিলেট সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়, যা সাধারণ মানুষের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোগী জানান, “হাসপাতালে এলেই বলা হয় ডাক্তার নেই, বাইরে থেকে চিকিৎসা নিতে। জরুরি বিভাগেও সবসময় ডাক্তার পাওয়া যায় না।” আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, “কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি থাকলেও সেগুলো নষ্ট থাকে অথবা অপারেটর না থাকায় কাজ করে না। আমাদের সব পরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে হয়, যা অনেক ব্যয়বহুল।”
কমলগঞ্জ উপজেলা নাগরিক ফোরামের সভাপতি মোঃ আবুল কালাম বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের সেবার মান উন্নয়নের দাবি জানিয়ে আসছি। এই হাসপাতালটি এলাকার মানুষের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবার অধিকার। কিন্তু এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই, ময়লা-আবর্জনা জমে থাকে, এবং চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো অকেজো পড়ে আছে। আমরা চাই সরকার দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করুক।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, “আমরা জনবল সংকট এবং যন্ত্রপাতির অভাব সম্পর্কে অবগত। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার বিষয়টি জানিয়েছি। চিকিৎসক নিয়োগ এবং যন্ত্রপাতির মেরামতের জন্য আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আমাদের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি রোগীদের সেবা দিতে।” তিনি আরও যোগ করেন, “হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে আমরা নিয়মিত কাজ করছি এবং বহিরাগতদের উপদ্রব কমাতেও পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
স্থানীয় সংসদ সদস্যও হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “কমলগঞ্জবাসীর জন্য একটি উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা আমার অগ্রাধিকার। আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলেছি এবং আশা করি খুব শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হবে।”
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, কেবল আশ্বাস নয়, দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ প্রয়োজন। তাদের দাবি, পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দেওয়া, আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা এবং হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করা গেলে কমলগঞ্জের সাধারণ মানুষ উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাবে। অন্যথায়, স্বাস্থ্যসেবার অভাবে মানুষের দুর্ভোগ বাড়তেই থাকবে।