গত বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারী) ১৫৭ জন যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে দেশে আসেন। যুক্তরাজ্যের হিথ্রো এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের এই ফ্লাইটটি অবতরণ করে।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রবাসীদের দেশে আসার পর চারদিন কোয়ারেন্টাইন এ থাকতে হবে (বর্তমানে ৭ দিন করা হয়েছে)। যুক্তরাজ্য ফেরত এসব প্রবাসী কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় গত রবিবার তাদের করোনা ভাইরাস সনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার ফলাফলে ১৫৭ জন প্রবাসীদের মধ্যে ২৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে।
এই ২৮ জন প্রবাসীদের সিলেটের খাদিমনগরে একটি চিকিৎসালয়ে থাকার এবং তাদের সেখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এসব প্রবাসীদের তখন সিলেটের সীমান্তিকের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করে সনাক্তকরণ এর ফলাফল দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু গত মঙ্গলবার ২৬ জানুয়ারি একই প্রবাসীদের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের আরটি-পিসিআর ল্যাবে এই ২৮ জনের মধ্য থেকে ২৫ জনেরই করোনা সনাক্তকরণ পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে।
করোনা পরীক্ষার রিপোর্টের এমন গড়বড় অবস্থার কথা স্বীকার করেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল।
দ্বিতীয় দফায় করোনা সনাক্তকরণ পরীক্ষার ফলাফলে কেন এমন হলো এর জবাবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে 'হয়তো প্রথম বার নিয়ম মেনে স্যাম্পল কালেকশন করা হয়নি' । তাছাড়া টেস্ট প্রক্রিয়া ত্রুটিযুক্ত হতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হয়। এবং উল্লেখ করা হয়, হয়তো যে ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছে সেখানেও থাকতে পারে সমস্যা।
যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটে আসা প্রবাসীদের মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি প্রমাণ হওয়ায় উদ্দিগ্ন স্বাস্থ্য বিভাগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে ও প্রবাসীদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এর ৭ সদস্যের একটি টিম মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটে এসে পোঁছায়। সাত সদস্যের টিমের করোনা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার পাশাপাশি ভাইরাস বহন কারী প্রবাসীদের শরীরে যুক্তরাজ্যে পাওয়া নতুন স্ট্রেইনের ভাইরাস বহন করছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখবেন বলে জানা যায়।
দ্বিতীয়বার করোনা টেস্ট পরীক্ষায় যেসব প্রবাসীদের টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে তাদের ছাড়া পাওয়ার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানান সিভিল সার্জন। তিনি বলেন ঢাকাঢর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল না আসার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।
পুলিশের তরফ থেকে জানা যায়, গত ৪ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৪০ জন প্রবাসী সিলেটে এসেছেন। এদের মধ্যে কোয়ারেন্টাইন শেষে নেগেটিভ সনদ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৭২ জন। যেসব প্রবাসী নেগেটিভ সনদ পাননি তারা সিলেটের বিভিন্ন হোটেলে কোয়ারেন্টিনরত অবস্থায় আছেন।
প্রবাসীদের নিয়ে উদ্বুদ্ধ এই পরিস্থিতিতে তারা নিজেরা যেমন অসুবিধায় পড়েছেন, তেমনি অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে তাদের পরিবার পরিজন ও আত্মীয়স্বজনেরও। দীর্ঘদিন পর দেশে ফেরে একবার করোনা পজিটিভ, অন্যবার নেগেটিভ আসায় বিষয়গুলো দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করেছে দেশে ও বিদেশে থাকা প্রবাসীদের পরিবারের মধ্যে। এর মধ্যেই অভিযোগ উঠেছে, যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের দেশে আসার পর এয়ারপোর্টে হয়রানিমূলকভাবে কোভিড পজিটিভ দেখানো হচ্ছে বলে। এ বিষয়ে একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। Sylhet 2 London নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায় এয়ারপোর্টে ছোট ছোট বাচ্চা ও বয়স্ক প্রবাসীরা দীর্ঘক্ষণ এলোমেলোভাবে এয়ারপোর্টের ভেতরে অবস্থান করছেন। ভিডিওতে একজন প্রবাসীকে উচ্চবাচ্য করতেও শুনা যায়।
অন্য আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ত্রুটিযুক্ত একটি থার্মোমিটার দিয়ে প্রবাসীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যায় বাংলাদেশের স্থানীয় মেশিন দিয়ে যে তাপমাত্রা দেখানো হচ্ছে সেটিতে তাপমাত্রা বেশি অর্থাৎ অস্বাভাবিক কিন্তু যাত্রীর সঙ্গে থাকা থার্মোস্ট্যাটে তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি পর্যন্ত কম দেখাচ্ছে। এসব নিয়েও বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।