এ কেমন সামাজিক প্রথা, বাংলাদেশের আর কোথাও এই প্রথা চালু নেই। শুধুমাত্র সিলেটের সকল জেলাগুলোতে রয়েছে এই প্রথা। মেয়ের বিয়ের পর হাজার হাজার টাকা খরচ করে পাঠাতে হবে জৈঠারী (জৈষ্ঠ্যমাসের সকল ফল) এবং রমজান মাসে ইফতারি।
মৌসুমি ফলের সিজন আসলেই মেয়ের বাড়িতে আম, কাঠাল, আনারস, আপেল, কমলা, আরো নানান জাতের ফলসহ কৈ, মিষ্টি, জিলেবী, আরো কতো কী।
আবার রমজান মাসে বাহারী ইফতারি, গরু/মুরগির মাংসের বিরিয়ানী, ছোলা, নানান রকল ফল, কার্টুন ভর্তি মিষ্টি জিলেবী, খেজুর ইত্যাদি ইত্যাদি।
কেনো এইসব, কোথা হতে আসলো এইসব প্রথা? ইসলাম কী এইসব প্রথার পক্ষে যুক্তি দেয়? উত্তর সরাসরি না।
ধনীরা যদিও এই প্রথাকে সামাল দিতে পারে হাজার টাকা খরচ করে, কিন্তু মধ্যবিত্ত এবং নিন্মবিত্তের কি হবে? কীভাবে এতো টাকা যোগার করে মেয়ের বাড়ি ইফতার/জৈঠারী দিচ্ছে নিন্মবিত্ত পরিবার। বিক্রি করতে ঘরের ধান, পালিত হাস-মুরগী এমনকি গবাদিপশুও বিক্রি করে এই প্রথা রক্ষা করছে নিন্ম ও মধ্যবিত্ত বাবা- ভাইয়েরা।
একজন বাবাকে গালে ধরে নিশ্চুপ বসে থাকতে দেখে জীজ্ঞাস করলাম কী হয়েছে চাচা, আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? উত্তরে চাচা বললেন সিলেটি ভাষায়-( ভাতিজা পুরির বাড়ি ইফতার পাঠাইতাম, পকেট ও টাকা নাই, পুরিয়ে ফোন দিয়া কর তাইর আম্মারে, আম্মা শ্বাশুড়িয়ে কইরা ইফতার কোনদিন পাঠাইতায়, জিকাইরা মুরদ নাই নি তোমরার, পুয়ার শ্বশুর বাড়ি থাকি ইফতার বেশি আইতো, শ্বাশুড়িয়ে লাগা ঘর ও বড় মুখ করি বাটিয়া দিতা, একটু বাড়াইয়া দিতা কইয়ো আব্বারে)।
করোনার সময় কোন রুজি নাই, লকডাউনের মধ্যে কোন কাজ করতে পারছেন না চাচা, চিন্তা করতেছেন এলাকার সুদের ব্যবসায়ীর থেকে সুদে কিছু টাকা নিবেন। মেয়ের বাড়িতে ইফতার পাঠাবেন। রোজার পর আবার আসছে মৈসুমী ফলের পালা, তখন আবার পাঠাতে হবে জৈঠারী। এভাবেই গোপনে আর্তনাদ করে যাচ্ছেন নিন্মবিত্তের বাবা- ভাইয়েরা।
কিন্তু এতো আর্তনাদের মধ্যেও খুশির খবর হচ্ছে বর্তমান তরুন প্রজন্ম। তারা এই প্রথার ঘোর বিরোধ করছেন। তারা চান সিলেটের এই ইফতার এবং জৈঠারী প্রথা বন্ধ করা হোক, এবং এটা সম্পুর্ণ বন্ধ করতে পারবে একমাত্র নতুন প্রজন্ম। আমরা নতুন প্রজন্মরা যদি এই প্রথার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করি তাহলে বন্ধ হবে এই ইফতারি এবং জৈঠারী প্রথা নামক নিন্মবিত্তের আর্তনাদ।